Subscribe For Free Updates!

We'll not spam mate! We promise.

কান থেকে মাথার সমস্যা


মাথা ঘোরা আসলে কী
যে সকল সাধারণ উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ডাক্তারের শরনাপন্ন হয়মাথাঘোরা তার মধ্যে একটি অন্যতম উপসর্গ। এই মাথা ঘোরা বিভিন্ন রকমের হতে পারে। শরীরের ভারসাম্যহীনতাপড়ে পাওয়ামুচ্ছা যাবে বলে মনে হওয়ামস্তিষ্কে শুন্যতামাথায় ঘুর্নীর মত হওয়া বা পারিপার্শ্বিক পৃথিবী ঘুরছে মনে হওয়া। ইংরেজিতে এ গুলোকে Dizziness বলে। কেউ যখন বলে যেসে নিজে ঘুরছে বা পারিপার্শ্বিক পৃথিবীটা ঘুরছে সেটাকে vertigo বলে। আর এই ধরণের মাথা ঘোরা সাধারণত: কান তথা অন্তকর্ণের জন্যই হয়ে থাকে।
কান সম্পর্কে দুটি কথা
অন্তকর্ণ এর দুটি অংশ। সামনের অংশকে বলে ককলিয়া যা শ্রবণশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে এবং পিছনের অংশকে বলে ভেস্টিবিউল যা মাথার ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। অন্তকর্ণের ঝিল্লির মধ্যে তরল পদার্থ ও অতি সুক্ষ চুল সাদৃশ্য সংবেদনশীল অঙ্গ থাকে যা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে মাথার অবস্থান সম্পর্কে সংকেত পাঠায়।
শরীর ও মাথার নিয়ন্ত্রণ
মস্তিষ্কের বিশেষ অংশ যেমন-সেরিবেলামসেরিব্রামব্রেইনস্টেমশরীর ও মাথার ভারসাম্যতা এবং অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করে। চামড়ামাংসপেশীহাড় জোড়া ও চক্ষুশরীরের অবস্থান সম্পর্কে সংকেত পাঠায় মস্তিষ্কের ঠিকানায়। এগুলোর কোনোটাতেই স্বাভাবিক কার্য প্রক্রিয়ার ব্যাঘাত ঘটলে বিভিন্ন তীব্রতায় মাথাঘোরা রোগ হয়ে থাকে।
উপসর্গ
মস্তিষ্কচামড়ামাংসপেশীহাড় জোড়া এবং চক্ষুর কোন রোগ হলে শরীরের ভারসাম্যহীনতামস্তিষ্কে শুন্যতাসংজ্ঞাহীনতাহাল্কা ঘুনী হয়ে থাকে সঙ্গে বমি বমি ভাববমিনিস্টেগামস হয়ে থাকতে পারে। অন্তকর্ণের কোন রোগ হলে মূলত: তীব্র ঘুর্নী হয়ে থাকে সঙ্গে বমি ভাববমিনিস্টেগমাসভারসাম্য হীনতা ও শ্রবন শক্তি কম হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে। কিছু অতি সাধারণ অন্তকর্ণের রোগ যা মাথা ঘোরা সৃষ্টি করে। বিনাইন প্যারঅক্সিস্মাল পজিশনাল ভাইটাইগো এটি একটি অতি সাধারণ উপসর্গ। হঠাত্ করে মাথা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে নিলে মাথা ঘোরা শুরু হয়। সাধারণত শোবার সময় মাথা এদিক ওদিক করলেনামাজ পড়লে বা মাথা হেলিয়ে কোন কাজ করলে এই জাতীয় মাথা ঘোরা শুরু হয়। বয়সজনিত কারণেমাথায় আঘাত প্রাপ্ত হলে অন্তকর্ণের ঝিল্লির ভিতরের তরল পদার্থের কিছু পরিবর্তনে এই রোগ হয়। সুখের বিষয় এই যেএই ধরণের vertigo বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না এবং ধীরে ধীরে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর চিকিত্সা প্রয়োজন হয়।
মিনিয়ার্স ডিজিজ
এই রোগে হঠাত্ করে মাথা ঘোরা শুরু হয়সাথে বমি ভাববমিভারসাম্যহীনতাশ্রবণ শক্তি সাময়িক কমে যাওয়ানিস্টেগমাস থাকতে পারে। এর স্থায়ীত্ব হয় কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক দিন। অন্তকর্ণের ঝিল্লির কারণেই এই রোগ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের সাহায্যে চিকিত্সা করা হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রপ্রচার এর প্রয়োজন হতে পারে।
ভেস্টিবিউলার নিউরোনাইটিস
ভাইরাসজনিত কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। নিকট অতিত অথবা বর্তমানে ফ্লু হয়ে থাকতে পারে। এই রোগের মাথা ঘোরার স্থায়িত্ব সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। পূর্ণ বিশ্রাম সাথে কিছু ওষুধ এর একমাত্র চিকিত্সা।
ল্যাবিরিনাথাইটিস
অন্তঃকর্ণে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া জনিত প্রদাহ হলে এই রোগ হয়। কানে কম শুনতে পাওয়াবমিবমি ভাবচোখের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলভারসাম্যহীন থাকা স্বাভাবিক। অনেক সময় ল্যাবিরিনাথাইটিস-এর আশে পাশে কোন প্রদাহ হলে মাথা ঘোরা হয়ে থাকে। একে সেরাস ল্যাবিরিনথাইটিস বলে।
একুইস্টিক নিউরোমা
কানের ভেতরের সুড়ঙ্গ পথে ক্যানাল বা সিপি এ্যানজেল-এ এধরনের টিউমার হতে পারে। তবে এতে শুধু একদিকের শ্রবণ শক্তি কমে যায়। কেবলমাত্র অস্ত্রপ্রচার এর সাহায্যে এর  চিকিত্সা করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য কারণ
কানের আরো কিছু সাধারণ কারণে মাথা ঘোরা রোগ হয়। যেমন মধ্যকর্ণে প্রদাহইউস্টাশিয়ান টিউবের বন্ধ থাকা বা প্লেনে ভ্রমণে বেরো ট্রমা হওয়াকানে শক্ত খৈল কানের পর্দায় চাপ প্রয়োগ করলে মাথা ঘোরা রোগ হতে পারে।
কান ছাড়া অন্য যে সব কারণে মাথা ঘোরা রোগ হতে পারে
১. মস্তিষ্কের বিশেষ জায়গায় রক্তের সঞ্চালন কম হওয়ারক্তক্ষরণ হওয়ামস্তিষ্কের টিউমার কিংবা মাল্টিপাল স্ক্রোরোসিস হলে।
২. রক্ত স্বল্পতারক্তচাপ হঠাত্ কমে গেলে
৩. উপর থেকে নিচে তাকালে
৪. মাইগ্রেন হলে
শেষ কথা
মাথা ঘোরা রোগ অনেক কারণেই হতে পারে। এর জন্য পরিপূর্ণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজনবিশেষ করে তীব্র ঘুর্নী বা vertigo হলে অবশ্যই কোনো নাককান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত্। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে না। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবার আশঙ্কা থেকে যায়।

**************************

লেখক: প্রফেসর মেজর (অব:) এম. মোতাহার হোসেন  

Socializer Widget By Blogger Yard
SOCIALIZE IT →
FOLLOW US →
SHARE IT →