Subscribe For Free Updates!

We'll not spam mate! We promise.

টাইফয়েড জ্বর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ


বাংলাদেশের জীবনযাত্রার মান তেমন স্বাস্হ্যকর নয়। তাই এখানে টাইফয়েডের রোগজীবাণু সহজেই সংক্রমিত হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার জনের মধ্যে ৪ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। আর ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে ১ হাজার জনের মধ্যে ১৯ জন টাইফয়েডে ভোগে। অর্থাৎ অন্যান্য অনেক রোগের মতো টাইফয়েডের হুমকিও শিশুদের জন্যই বেশি। উন্নত বিশ্বে যথাযথ স্বাস্হ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার কারণে তারা প্রায় টাইফয়েডমুক্ত।

টাইফয়েডের জীবাণু দুষিত পানি ও দুষিত খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। মাছি এ রোগবিস্তারে বেশি দায়ী। শুষ্ক মৌসুমে পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে কিংবা বর্ষা মৌসুমে পানিবাহিত রোগের বিস্তারের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এ দুই মৌসুমেই এই রোগ বেশি হয়।
টাইফয়েড মুলত পরিপাকতন্ত্রের রোগ। কোনো জ্বরই নিজে কোনো রোগ নয়; বরং অন্য কোন রোগের উপসর্গ হিসেবে শরীরে জ্বর আসে। এ রোগের জীবাণু দ্বারা পরিপাকতন্ত্র সংক্রমিত হয়। আর এ কারণেই জ্বর হয়।
লক্ষণঃ টাইফয়েড রোগের সুচনাটা একটু কপট ধরনের; অর্থাৎ আক্রান্ত হওয়ার পরেও বেশ কিছুদিন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। রোগ শুরুর দিকে চাপা অস্বস্তি, মাথা ব্যথা, ঝিমঝিম করা, শরীরময় ব্যথা ইত্যাদি অনুভুত হয়। সাধারণত জ্বর একটু বাড়ে, পরে আবার একটু কমে। এভাবে ক্রমাগত বাড়া-কমার মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে জ্বর মোটের ওপর বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা বাড়া-কমার মাধ্যমেও মোটামুটি একটা সীমার মধ্যে থাকে। তৃতীয় সপ্তাহে বাড়া-কমার মাধ্যমে জ্বর কমতে থাকে। ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে। কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। পেট ফেঁপে ওঠে, কাশি হয়, প্লীহা বড় হতে পারে। পেটের ওপরের দিকে বা পিঠে লালচে দাগ হতে পারে, যা একটু চাপ দিলে হালকা হয়ে যায়। রোগী প্রলাপ বকতে পারে, এমনকি অচেতনও হতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষাঃ রক্তের সাধারণ পরীক্ষা করতে হবে। প্রথম সপ্তাহে রক্ত কালচার করলে জীবাণু পাওয়া যেতে পারে। অবশ্য রক্তের কালচারে প্রথম সপ্তাহের পরও জীবাণু পাওয়া যায়। বহুল প্রচলিত ভিডাল টেস্টের মাধ্যমে দ্বিতীয় সপ্তাহে জীবাণুর উপস্হিতির প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। তবে এ পরীক্ষার ফলাফল নিশ্চিত কোনো তথ্য দেবে না এবং এ ফলাফলে যথেষ্ট সংশয়ের বিষয় রয়েছে। তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পায়খানা কালচারেও জীবাণু পাওয়া যেতে পারে।
চিকিৎসাঃ চিকিৎসার জন্য শরীরে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যাস আছে কি-না তা পরীক্ষা করা উচিত। এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যাস থাকলে শরীরে কোনো কোনো ওষুধ কারো কারো ওপর কোনো কাজ করবে না। ২০০১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ ভাগের কম ক্ষেত্রে এম্পিসিলিন, কোট্রাইমোক্সাজল, ক্লোরামফেনিকল ইত্যাদি কাজ করেছে, ৯৮ ভাগের ক্ষেত্রে সেফট্রায়োক্সোজন কাজ করেছে এবং সবক্ষেত্রেই সিপ্রোফ্লোক্সাসিন কাজ করেছে।

সিপ্রোফ্লোক্সাসিন সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, বিশেষত শিশু ও বয়োসন্ধিকালীনদের জন্য প্রযোজ্য নয়। চিকিৎসক সার্বিক বিবেচনা করে ওষুধ দেবেন। বিভিন্ন ওষুধে রেজিস্ট্যান্টদের ক্ষেত্রে সেফট্রায়োক্সোন ব্যবহার করা যায়। রোগের মেয়াদ দীর্ঘ হলে বা রোগী খুবই কাতর হলে স্টেরয়েড দেয়া যেতে পারে।
টিকাঃ বর্তমানে এ রোগের টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে টিকা নেয়াই সবচেয়ে ভালো।
জটিলতাঃ উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে টাইফয়েড সংকটাপন্ন পরিস্হিতি তৈরি করতে পারে। পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তপাত হতে পারে, এমনকি পরিপাকতন্ত্র ছিদ্র পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এ রোগের কারণে হাড় বা সন্ধিতে প্রদাহ, মেনিনজাইটিস, পিত্তথলিতে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, শরীরের বিভিন্ন স্হানে ফোঁড়া, স্নায়বিক সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। বিভিন্ন জটিলতা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

প্রতিরোধ
- বিশুদ্ধ পানি পান;
- খাবার পরিষ্কার রাখা;
- পাস্তুরিত বা ফুটানো দুধ খাওয়া;
-স্বাস্হ্যকর বর্জø নিষ্কাশন ব্যবস্হা;
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা।
মোট কথা টাইফয়েড রোগ নিরাময়ে স্বাস্হ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। খাবার ও পানীয়ের পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমেই এই জটিল রোগ এবং এর ভয়াবহ জটিলতা এড়ানো সম্ভব। শিশু-কিশোরদের জন্য এ রোগে বিশেষ সতর্কতা একান্ত আবশ্যক।

Socializer Widget By Blogger Yard
SOCIALIZE IT →
FOLLOW US →
SHARE IT →