বাল্য ও কৈশোর এ দুটো সময়ই শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। জন্মের পর থেকেই ছোট শিশুটির যে দ্রুত বর্ধন প্রক্রিয়া আমরা দেখি তা ১৮-১৯ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে। সুতরাং এ সময়টাতে শিশুর দেহে পুষ্টির চাহিদা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি থাকে। এ সময়টাতে মানসিক বিকাশ পূর্ণভাবে বিকশিত হয় না যার ফলে সে এ বয়সটাতে নিজেকে নিয়ে খুব একটা সচেতন থাকে না এবং সে তার শরীরের নূন্যতম পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে ব্যার্থ হয়। যার ফলে শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়, নানারকম সংক্রামক রোগের শিকার হয় এবং অনেক সময় তাকে সমস্ত জীবনই রুগ্ন ও দুর্বল দেহের বোঝা বয়ে বেড়াতে হতে পারে।
এক্ষেত্রে শিশুর চেয়ে মা-বাবার দায়িত্ব বেশি। তাদের এ বয়সী শিশুদের খাদ্যের ব্যপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।
মেয়েদের ১১-১৩ বছর এবং ছেলেদের ১৩-১৫ বছর বয়সে বৃদ্ধি সর্বাপেক্ষা দ্রুত হয়। দেহের পুষ্টির চাহিদা সকল শিশুর ক্ষেত্রে একরকম নয়। ছেলে-মেয়েভেদে, বয়সভেদে অনেক সময় একই বয়সের হলেও আকৃতিগত পার্থক্যের দরুন পুষ্টি চাহিদা কমবেশি হতে পারে। যার দেহের বৃদ্ধি যত দ্রুত হয় তার খাদ্যের চাহিদা তত বেশি হয়। খাদ্যের উপর দেহের গঠন ও বৃদ্ধি যে কতখানি নির্ভর করে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাড়ন্ত বয়সী ছেলে-মেয়েদের খাদ্যে অবশ্যই কিছু গুণাবলী থাকতে হবে যা তার সকল চাহিদা পূরণ করে দেহের দ্রুতগঠন ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
০ খাদ্যকে কর্মশক্তি যোগাবার মত ক্যালরিবহুল হতে হবে।
০ ক্ষয়পূরণ ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি পর্যাপ্ত পরিমাণে হতে হবে।
০ যেহেতু এ সময় হাড় ও দাঁতের গঠন হয় এ জন্য এ সময় পর্যাপ্ত খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন ডি সম্পন্ন খাবার দিতে হবে।
আমাদের দেশে এই বয়সী ছেলে-মেয়েরা যে সকল পুষ্টি উপাদানের অভাবে ভোগে তার মধ্যে প্রেটিন, ক্যালসিয়াম, লোহা ও ভিটামিন এ প্রধান। যার প্রধান কারণ দারিদ্র্যতা, খাদ্য চাহিদা সম্পর্কে অজ্ঞতা, খাবারের প্রতি অনিহা। বা অরুচি এ সময়ে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে বেশি সময় কাটায় ফলে যে টিফিন খায় তা যথসামান্য। ১০-১২ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের খাদ্যে প্রতিদিন ৩২০ গ্রাম খাদ্যশস্য, ৬০ গ্রাম ডাল, ১০০ গ্রাম ফল, ৫০ গ্রাম দুধ, ২০০ গ্রাম মাছ মাংস ও ১৩০ গ্রাম তেল বা ঘি থাকা প্রয়োজন। খাদ্যে এগুলোর উপাদান এর পরিমাণ কম হলে তা ক্ষতি সাধন করতে পারে।
এ ছাড়া বাচ্চারা খেতে না চাইলে প্রয়োজন বোধে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল দেয়া যেতে পারে তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বয়সের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মনে রাখবেন, এ বয়সী ছেলে-মেয়েদের খাদ্যের প্রতি আসক্তি কম থাকে কিন্তু দেহে খাদ্য চাহিদা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়েও বেশি থাকে।