Subscribe For Free Updates!

We'll not spam mate! We promise.

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা


বিশ্বজুড়ে অক্টোবর মাসটি ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস’ হিসেবে পালিত হয়। আমাদের বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংস্থার আয়োজিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন পোস্টার, লেখালেখি ও টিভি অনুষ্ঠানে নানাভাবে এর প্রতি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসা ও প্রতিরোধ বিষয়ে কাজ করছে, এমন সংস্থাগুলোর অনুষ্ঠানে একটি গোলাপি রিবনের ছবি ও প্রতিকৃতি দেখা যায়। এটি স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাসের প্রতীক। ১৯৮৫ সালে প্রথম স্তন ক্যান্সার সচেতনতা কানাডায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয়। এরপর বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে মাসব্যাপী এ কার্যক্রমটি ছড়িয়ে পড়ে। এর মূল ও মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল-তরুণ, বৃদ্ধ, চিকিৎসক, সেবিকা, শিক্ষক, ছাত্র, কর্মজীবীসহ সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টি।

উন্নত বিশ্বে নারীমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে স্তন ক্যান্সারকে দায়ী করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৮ লাখের বেশি নারী এ রোগে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১৩ মিনিটে একজন (অর্থাৎ বছরে প্রায় ৪০ হাজার নারী মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে এ রকম কোনো সমীক্ষা না থাকলেও এখানে আনুমানিক ২২ থেকে ২৫ হাজার নারী প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বলে একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে। এর মধ্যে বিনা চিকিৎসা বা অপ্রতুল চিকিৎসার জন্য মারা যাচ্ছে প্রায় ১৭ হাজার নারী।
একদিকে এই ক্যান্সারের আক্রমণ ও পরিণতির ভয়াবহতা যেমন সবাইকে আতঙ্কিত করে তোলে, অন্যদিকে এ রোগ শুরুতেই নির্ণয় করা গেলে সম্পূর্ণ ভালোও হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর অভিমত তা-ই। দেখা গেছে, আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত এমন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসে, যখন কিছুই আর করার থাকে না। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগ শনাক্তকরণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আন্দোলনই হচ্ছে বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্য। আমাদের দেশেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গুটিকয় সংগঠন স্তন ক্যান্সার নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
এই কর্মসূচি সফল করার জন্য চিকিৎসকেরা কিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এগুলো হচ্ছে-
নিজে নিজে পরীক্ষাঃ একটি সহজ ও খরচবিহীন পরীক্ষার মাধ্যমে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে স্তনের কোনো রোগকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়। এই সহজ পরীক্ষাটি মাসে অন্তত একবার গোসলের পর যেকোনো নারী নিজেই করতে পারে। যাদের মেনোপজ হয় তারা মাসিকের পর বা মাঝামাঝি সময় এবং মেনোপজে যারা গেছে, তারা মাসের প্রথম বা শেষ দিনটিতেও করতে পারে।
কী দেখতে হবেঃ স্তনের আকৃতির কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না, ত্বকের রং ও স্তনের বোঁটার পরিবর্তন, স্তনের ওপর চামড়া কমলালেবুর খোসার মতো কুঁচকে যাওয়া বা টোল পড়া, স্তনের বোঁটা থেকে রস ঝরা, বোঁটার চারপাশে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া এবং স্তনের বোঁটা ক্রমেই ভেতরে ঢুকে যাওয়া-এসব খেয়াল করতে হবে।
সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি প্রয়োজন মনে করলে স্তনের ম্যামোগ্রাফি বা সনোগ্রাফি করানোর জন্য বলতে পারেন।
ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষাটি সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০ বছরের নারীদের জন্য তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর এবং ৪০ থেকে ৪৯ বছরের নারীদের প্রতিবছর করতে বলা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে কিছু ব্যক্তিগত ঝুঁকির কথাও মনে রাখা ভালো। সেগুলো হলো-
--ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস।
--অল্প বয়সে মাসিক শুরু ও দেরিতে তা শেষ হওয়া।
--দেরিতে প্রথম সন্তান ধারণ।
--স্তনের কোনো রোগ বা জরায়ুর ক্যান্সার।
--কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বয়সকালে হরমোন চিকিৎসা (এইচআরটি) নেওয়া।
--স্থূলাঙ্গী, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগী।
--পারিপার্শ্বিক অবস্থা, যেমন-
ক) কীটনাশক।
খ) কলকারখানা ও ইঞ্জিন থেকে নির্গত গ্যাস বা ধোঁয়া।
গ) রাসায়নিক দূষিত পদার্থ দ্বারা পানি ও খাদ্য সংক্রমণ।
প্রতিরোধের দুটি প্রধান উপায়
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোঃ শিশুর এই জ্নগত অধিকার মা ও শিশুকে আরও নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করে। ‘মায়েরা তাদের শিশুকে কমপক্ষে দুই বছর পর্যন্ত স্তন্য দান করবে।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত-২৩৩)। আজ বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা এ কথার সত্যতা প্রমাণিত। আরও প্রমাণিত যে এর ফলে মা ও শিশু-দুজনই নানা রোগ থেকে রক্ষা পেয়ে থাকে।
খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন জীবনপ্রণালীঃ জীবনযাপন হতে হবে সহজ, অনাড়ম্বর ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। হালকা ব্যায়াম করে শরীর সতেজ রাখতে হবে। মদ্যপান, যেকোনো ধরনের তামাক গ্রহণ ও গুরুপাক চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিয়ে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে প্রচুর শাকসবজি ও মৌসুমি রঙিন ফল। মাছ ও সয়াজাতীয় খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কেননা এতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটো কেমিক্যাল, যা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মধ্যে যে ধারণাটি সবার জন্য জরুরি, তা হলো-স্তন ক্যান্সার ছোঁয়াচে কোনো রোগ নয়; এটি হওয়া মানেই মৃত্যু নয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক নিরূপণ ও চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই দ্বিধা-সংকোচ থেকে মুক্ত হয়ে এখন থেকেই স্তন পরিচর্যায় যত্নশীল ও সচেতন হোন। আসুন, আমরা সচেতনতায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে এই মরণব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তুলি। 

Socializer Widget By Blogger Yard
SOCIALIZE IT →
FOLLOW US →
SHARE IT →