ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। সুস্বাদুও বটে। খাওয়া হয় হরেক রকম ভাবে। যে ভাবেই খাওয়া হোক না কেন, আমরা ডিম থেকে পাই উৎকৃষ্ট মানের-মায়ের দুধের পরেই এর স্থান। সকল এমাইনো এসিডই আছে এই প্রোটিনে। এই প্রোটিনের প্রায় শতভাগই শরীরের কাজে লাগে। উল্লেখ্য যে, দুধের প্রোটিনের প্রায় ৮৫ শতাংশ, মাছের ৭৬ শতাংশ, মাংসের ৭৪ শতাংশ আর সীমের প্রায় ৫৮ শতাংশ শরীরের কাজে লাগে। তবে ডিমের এই প্রোটিনই আবার এলার্জিরও কারণ, বিশেষ করে শিশুদের। ডিমের সাদা অংশের ওভালবুমিন, ওভোমিউকয়েড, ওভোট্রান্সফেরিন এবং লাইসোজাইম নামক প্রোটিনই এলার্জির জন্য বেশি দায়ি। আর ওভালবুমিন একাই দায়ি শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। এই এলার্জির জন্য পাতলা পায়খানা, বমি, নাক দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চুলকানি, ত্বকে চাকা চাকা হওয়া, একজিমা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই শিশুদেরকে প্রথম প্রথম কুসুম দিয়ে শুরু করাই ভাল।
ডিমের কুসুমে থাকে ফ্যাট, ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ লবণ। মুরগির ডিমের চাইতে হাঁসের ডিম আকারে বড় এবং তাতে ফ্যাটের পরিমাণ একটু বেশি। এই ফ্যাটের প্রায় ২৭ শতাংশই স্যাচুরেটেড ফ্যাট। প্রতি ডিমে আছে প্রায় ২৫০ মিগ্রা• কলেস্টেরল। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের কুসুম এল ডি এল কলেস্টেরল পরিমাণ বেশি, তাদের কুসুম খাওয়া উচিত কম। তবে গবেষণায় এ ও দেখা গেছে যে, যাদের রক্তের কলেষ্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক, দৈনিক দুইটা ডিম খেলেও তাদের রক্তের কলেস্টেরল তেমনটা বাড়ে না। হৃদরোগের সম্ভাবনাও বাড়ে না তাদের। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের মতে, সুষম খাবারের অংশ হিসেবে সপ্তাহে চারটা ডিমের কুসুমও খাওয়া যেতে পারে। তবে বেশি ডিম খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আবার প্রতিদিন ডিম খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। ডিমের কুসুমে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ই। এ ছাড়াও আছে বিভিন্ন খনিজ লবণ। যেমন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ইত্যাদি। ডিমে কার্বোহাইড্রেট নাই। নাই ভিটামিন সি। একটা ডিম থেকে শক্তি পাওয়া যায় প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ক্যালরি।
ডিমের খোসা শক্ত আবরণ, রোগ জীবাণু ভেতরে যেতে দেয় না। তবে খোসায় লেগে থাকতে পারে মুরগি বা হাঁসের মল এবং মলের ‘সালমোনেলা’ নামক জীবাণু। আর খোসাটা যদি ফাটা কিংবা ভাংগা থাকে, তবে এই জীবাণু ডিমের ভেতরে চলে যেতে পারে। হতে পারে ‘সালমোনেলোসিস’। তাই খোসা ফাটা কিংবা ভাংগা থাকলে সে ডিম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।