হরমোন হচ্ছে শক্তিশালী কিছু কেমিক্যাল, যা আমাদের দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেহে প্রাকৃতিকভাবেই হরমোন উৎপন্ন হয় এবং বিভিন্ন উপায়ে দেহে প্রভাব বিস্তার করে।
তবে কিছু কিছু হরমোনের মাত্রা বয়সকালে কমতে থাকে অথবা আমাদের দেহও পর্যাপ্ত হরমোন উৎপন্ন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। সেসব ক্ষেত্রে বাইরে থেকে হরমোন প্রয়োগ কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত কিংবা ফলদায়ক সেটাই এখানে আলোচনার বিষয়।
বিশেষ কয়েকটি হরমোন যেমন DHEA, গ্রোথ হরমোন, টেসটোসটেরন, ইস্ট্রোজেন এ ক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। যৌবন ধরে রাখার জন্য কিংবা বয়স পিছিয়ে দেয়ার জন্য বাইরে থেকে এগুলোর ব্যবহার কতটুকু ফলপ্রসূ অথবা এসব হরমোন আদৌ গুরুত্বপূর্ণ কি না তা আজো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাস্তব কথা হচ্ছে, যাদের বেলায় সত্যিকারভাবেই হরমোনের ঘাটতি বা সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের বেলায় কিছুটা উপকারী হলেও এসব হরমোনের ব্যাপারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। সঠিক মাত্রায় প্রয়োগে দেহ সুস্থ থাকবে, কিন্তু ভুল মাত্রায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার দেহে প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হরমোনের কার্যকারিতার সাথে কৃত্রিমভাবে প্রয়োগকৃত হরমোনের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা যাক। দেহের অভ্যন্তরস্থ কোষগুলোর সমষ্টিতে গ্রন্থির সৃষ্টি এবং নালীবিহীন গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন রক্তে মিশ্রিত হয়ে এবং বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে, কিন্তু কৃত্রিমভাবে দেহে নিসৃত হরমোনের মতো নয়। কারণ দেহে হরমোন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নিঃসৃত হয়ে থাকে। আরেকটি পার্থক্য হচ্ছে, প্রয়োগকৃত হরমোন দেহে বেশি মাত্রায় বিরাজ করতে পারে। ফলে নেগেটিভ প্রভাব দেখা দিতে পারে। এমনিক দেহের হরমোনও বিপরীতমুখী প্রভাব সৃষ্টি করে। তাই অল্পমাত্রার এসব রাসায়নিক যৌগ হরমোন তা দেহ থেকেই নিঃসৃত হোক অথবা বাইরে থেকে প্রয়োগ করা হোক না কেন এগুলোর ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে।
প্রথমেই দেহের বৃদ্ধি সাধনকারী হরমোন গ্রোথ হরমোন নিয়ে আলোচনা করা যাক। কারো কারো মতে এই গ্রোথ হরমোন বার্ধক্যেও লক্ষণগুলো কমাতে ভূমিকা রাখে। যেমন মাংশপেশীর বৃদ্ধি এবং চর্বি কমানো এবং দেহে শক্তি ও ভালো লাগা এবং সুস্থ থাকার অনুভূতি সৃষ্টিতে এই হরমোন সহায়ক।
আমাদের মস্তিষ্কে অবস্থিত পিটুইটারি গ্রন্থিকে মাস্টার গ্লান্ড ও বলা হয়। তা থেকে নিঃসৃত গ্রোথ হরমোন আমাদের দেহের টিস্যু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক বৃষ্টি ও পরিপূর্ণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য অতীব জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই গ্রোথ হরমোন বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর মাত্রা কমে যেতে থাকে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে বাইরে থেকে প্রয়োগকৃত এই হরমোন ব্যক্তিবিশেষ উপকার নিয়ে আসতে পারে। অনেক সময় শিশুরা অস্বাভাবিকভাবে খাটো হতে পারে যদি তাদের শরীরে এই হরমোন সঠিকভাবে তেরি না হয়। এসব ক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রয়োগ করলে তা দৈহিক বৃদ্ধি ঘটবে। অন্য দিকে তরুণ বয়সে যদি গ্রোথ হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী পিটুইটারি গ্রন্থি কোন কারণে তা টিউমারের জন্য অথবা অন্য কোন অপারেশনের ফলে ফেলে দিতে হয় তাহলে এই হরমোন আর তৈরি হয় না এবং এসব ক্ষেত্রে মেদবহুল দেহের সৃষ্টি হয়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে বাইরে থেকে হরমোন প্রয়াগে ওজন কমে যাবে।
এখনো রীতিমত গবেষণা হচ্ছে যে, এই গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধ বয়সে প্রয়োগের ফলে এ সমযে তাদের মাংশপেশি শক্তিশালী ও দেহের চর্বি কমানো যায় কি না। এই ধরনের গবেষণায় রোগীদেরকে আরো বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে রেখে দেখা হয়েছে যে, এই বয়সে এই হরমোন প্রয়োগে কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। পাশ্বৃপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস রোগ্ ত্বকে ও টিস্যুতে পানি টেনে নিয়ে আসাতে ব্লাড ক্যান্সার বেড়ে যেতে পারে এবং হার্ট ফেল্যুউর হতে পারে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও হতে পারে। যদিও বিদেশে বহু লোক বার্ধক্য ঠেকাতে অঢেল অর্থ অপচয় করছেন, দেহে বাইরে থেকে হরমোন প্রয়োগ করছেন কিন্তু ফলাফল খুব আশাপ্রদ নয়।
এখনো রীতিমত গবেষণা হচ্ছে যে, এই গ্রোথ হরমোন বৃদ্ধ বয়সে প্রয়োগের ফলে এ সমযে তাদের মাংশপেশি শক্তিশালী ও দেহের চর্বি কমানো যায় কি না। এই ধরনের গবেষণায় রোগীদেরকে আরো বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে রেখে দেখা হয়েছে যে, এই বয়সে এই হরমোন প্রয়োগে কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। পাশ্বৃপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস রোগ্ ত্বকে ও টিস্যুতে পানি টেনে নিয়ে আসাতে ব্লাড ক্যান্সার বেড়ে যেতে পারে এবং হার্ট ফেল্যুউর হতে পারে, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা ও হতে পারে। যদিও বিদেশে বহু লোক বার্ধক্য ঠেকাতে অঢেল অর্থ অপচয় করছেন, দেহে বাইরে থেকে হরমোন প্রয়োগ করছেন কিন্তু ফলাফল খুব আশাপ্রদ নয়।
এবারে টেসটোসটেরন হরমোন প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক। টেসটোসটেরন হরমোন পুরুষ হরমোন হলেও নারী-পুরুষ উভয়ের দেহে টেসটোসটেরন উৎপাদিত হয়। পুরুষদের দেহে টেসটোসটেরন মাত্রা বেশি হওয়াতে পুরুষালী লক্ষণ যেমন কণ্ঠস্বর ভরাট, দাঁড়ি-গোঁফ গজানো এবং মাংশপেশির প্রশস্ততা ইত্যাদি দেখা দেয়। এই টেসটোসটেরন হরমোন পুরুষদের যৌন অনুভূতি ও চেতনা ও পুরুষাঙ্গের উত্থান ক্ষমতায় বিশেষ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
বার্ধক্যে টেসটোসটেরন মাত্রা কমে যেতে পারে। তবে বার্ধক্যে যে যৌন দুর্বলতা দেখা দিয়ে থাকে তার সবগুলোর কারণই কিন্তু টেসটোসটেরন কমে যাওয়ার জন্য নয়। যেমন কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগ, রক্তনালীর সমস্যা ইত্যাদি আরো কিছু কারণ রয়েছে।
ওষুধ হিসেবে টেসটোসটেরন ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক আগে থেকেই তবে ব্যবহারের যৌক্তিকতা তাদের জন্যই হওয়া উচিত যাদের দেহে টেসটোসটেরন মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম রয়েছে অথবা যাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে হরমোন তৈরি হচ্ছে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যাদের দেহের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তা টিউমার অথবা ইনফেকশনের কারণে হতে পারে অথবা টেসটোসটেরন উৎপাদনকারী অণ্ডকোষ কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা অসুস্থ থাকার কারণেও হতে পারে।
যাদের সত্যিকারভাবেই টেসটোসটেরন মাত্রা অপূর্ণতায় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রয়োগকৃত টেসটোসটের ওষুধের অনেক উপকারিতা ও কার্যকারিতা রয়েছে। এই হরমোনের অভাবে পুরুষদের মাংশপেশি ও হাড় দিন দিন দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে শুধু এই হরমোনের অভাবে ও স্বল্পতায় যৌন উদ্দীপনা ও আগ্রহ ও ক্ষতা, বিশেষ করে পুরুষাঙ্গের উত্থান ক্ষমতা কমে যেতে পারে। বাইরে থেকে প্রয়োগকৃত হরমোন ব্যবহারে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। কারণ এর ফলে হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখা যায়। তবে সব কিছুরই অতিরিক্ত প্রয়োগ ও ব্যবহার ক্ষতিকর। টেসটোসটেরনের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা থাকার পরেও এর অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও টেসটোসটেরন হরমোনের ব্যবহার মাংশপেশির বৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি ঘটাতে গিয়ে বিতর্কিত ঘটনার অবতারণা হয়েছে।
যাদের সত্যিকারভাবেই টেসটোসটেরন মাত্রা অপূর্ণতায় রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে প্রয়োগকৃত টেসটোসটের ওষুধের অনেক উপকারিতা ও কার্যকারিতা রয়েছে। এই হরমোনের অভাবে পুরুষদের মাংশপেশি ও হাড় দিন দিন দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে শুধু এই হরমোনের অভাবে ও স্বল্পতায় যৌন উদ্দীপনা ও আগ্রহ ও ক্ষতা, বিশেষ করে পুরুষাঙ্গের উত্থান ক্ষমতা কমে যেতে পারে। বাইরে থেকে প্রয়োগকৃত হরমোন ব্যবহারে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। কারণ এর ফলে হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখা যায়। তবে সব কিছুরই অতিরিক্ত প্রয়োগ ও ব্যবহার ক্ষতিকর। টেসটোসটেরনের প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা থাকার পরেও এর অতিরিক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ও টেসটোসটেরন হরমোনের ব্যবহার মাংশপেশির বৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি ঘটাতে গিয়ে বিতর্কিত ঘটনার অবতারণা হয়েছে।
তাদের বেলায় দেখা গেছে যে, এদের বেশিরভাগই লোকেরই টেসটোসটেরন হরমোন মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে এবং বাইরে থেকে প্রয়োগের ফলে হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেখা যাবে যে, প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেছে, দেহের চর্বি কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে গিয়ে পরবর্তীতে হৃদরোগের সৃষ্টি করতে পারে। বন্ধ্যাত্ব ও ব্রণ সমস্যারও বৃদ্ধি ঘটাতে পারে। যদিও এটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি যে, বাইরে থেকে অতিরিক্ত টেসটোসটেরন হরমোন প্রয়োগের ফলে প্রস্টেট গ্রন্থির ক্যান্সার হতে পারে কি না।
তাই পরিশেষে বলতে চাই যে, বার্ধক্য রোধে নিজ থেকে হরমোন প্রয়োগ করা ঠিক নয় অনেক সময় দেখা যায় যে, আমাদের দেশে হাতুড়ে ডাক্তার অথবা যারা ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করেন অথবা সাধারণ এমবিবিএস ডাক্তারও তাদের প্রাত্যহিক প্রাকটিস জীবনে যৌন সমস্যা দেখা দিলে যথাযথ হরমোন পরীক্ষা না করে সরাসরি হরমোনের ওষুধ ব্যবহারের কথা বলে থাকেন অথবা ব্যবস্থাপত্র লিখে থাকেন। এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বার্ধক্যের সব যৌন সমস্যা বা যৌন দুর্বলতার কারণই হরমোনজনিত নয়। কাজেই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে চিকিসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আপনার চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন যে বার্ধক্যে আপনার হরমোন গ্রহণ কতটুকু প্রয়োজন ও কতটুকু এর উপকারিতা রয়েছে।